শিক্ষাগ্রহন শিশুর অধিকার
সন্তান জন্মায়,সুসন্তান জন্মায় না।সন্তান কে সুসন্তান হিসাবে গড়ে তোলেন তাদের পিতা মাতা। এই সন্তান কে সুসন্তান হিসাবে পরিনত করতে পিতামাতা কে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়।এই পথকে বিভিন্ন বিজ্ঞানী গন বিভিন্ন ভাবে বিভাজিত করেছেন।কেউ কেঊ শিশুর জন্মের পর থেকে ১০০০ দিনের কথা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন,কেঊ কেঊ প্যারেন্টিং –র কথা বলেছেন আবার শিশুর জীবনকাল কে বয়সের মধ্যে ভাগ ভাগ করে আলাদা আলাদা করে বিকাশ ও উথ্থান কে আলোচনার মধ্যে প্রাধান্য দিয়েছেন।সমাজ বিজ্ঞানী , মনোবিজ্ঞানী , শিশুবিদ ও শিশু মনোবিদ সহ আরও অনেকে শিশুর জীবন ধারা কে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা করেছেন কিন্তু মানব শিশুর মস্তিকরূপি অপরিসীম সম্ভাবনাপুর্ণ যন্ত্রটির ব্যবহারে অতিমানব বা দিব্যমানব বলে গন্ডিবদ্ধকরা সম্ভব হয় নি।
বোঝা হয়ে উঠিনি
প্রকৃতিপ্রদত্ত,বিশ্বপ্রকৃতির এ যাবতকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। গতানুগতিক চিন্তাধারার
মাধ্যমে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ধারনা নিয়ে যুগের পরে যুগ যে নিয়ম কানুন শ্রেনিবদ্ধ
কাঠামোতে প্রচলিত হয়ে আসছে সেখানে শিশুর নিজস্ব প্রতিভা বা সত্তা বলে কিছু খুজে পাওয়া
না গেলে ও প্রেষনের মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়া নীতি মালা প্রতিনিয়ত দৃশ্যমান । যা অভিভাবক
, শিক্ষক, সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত শিশুকে এক ধরনের চিত্রকর বা অভিনেতা হিসাবে খোজে। শিশুর নিজের সত্তা
কে কখনো অনুধাবন করার প্রয়াস করে না ।আমরা ভুলে যাই, সে শিশু তার ও মন আছে,একটা ভাবনার নিজস্ব ভুবন আছে।নিজেদের স্ব
প্রতিষ্ঠা জানান দেওয়ার জন্য শিশুর অধিকার ক্ষুন্য করে মানসিক বোঝা সৃষ্টি করতে আমারা
কুন্ঠাবোধ করি না।শিশুর উপভোগ্য শৈশব কৈশোর হারিয়ে যায় তাকে না বোঝার অক্ষমতার কাছে।
শিশু একটা
রহস্যময় প্রতিবিম্ব যার প্রতি পরতে পরতে শুধু বিস্ময় বিদ্যমান। এই রোমাঞ্চকর অধ্যায়ের
বিকাশের জন্য নিজেকে বিস্ময় অভিলাষী মন মানসিকতা তৈরি করতে হবে। শিশুর বিকাশে প্রথম
১০০০ দিনের কথা অনেক জোর দিয়ে বললেওশেষ মেষ ওই পুষ্টিকর খাবার আর পিতা মাতার অভিভাবকত্যর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।
বিয়ে হয়েছে,ঘরে সন্তান আসবে।পরিবারে সবার সাথে সেও বড় হবে। সেকেলে ধারনার সাথে মিসে
গিয়ে উপেক্ষিত থেকে যায় শিশুর সঠিক বিকাশ।
শিশু যে কোন বিষয়ে
কম বুঝতে পারে বা বুঝতে চায না ,তাকে আমরা মেধাহীনতা বা কমবুদ্ধিসম্পন্ন বা নির্বুদ্ধিতার
তীলক কপালে পরিয়ে দেই কিন্তু ভাবিনা যে শিশু যে কোন বাধা ধরা পদ্ধতিতে শেখেনা। শিশুকে
শেখানোর জন্য শিক্ষক কে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।যে শিক্ষক সেটা পারছেন
না ততক্ষন শিশুকে দুর্বল বা পিছিয়ে পড়া ভাবা যাবে না আর শিক্ষককে ভালো শিক্ষক বলা যাবে
না। শিশুর শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে আপনি পারদর্শি হতে পারেন কিন্তু সার্থক শি্ক্ষাগুরু
হতে গেলে সবার আগে আপনাকে শিক্ষকের তকমা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।শিশুর আত্মার আত্মীয় হতে
হবে,বন্ধু হতে হবে,সজীব প্রানবন্ত,সত্তাসম্পন্ন ,রহস্যময় অলৌকিক অনুপ্রেরনাদায়ী ও কৌতুহলী
মানুষ হিসাবে নিজেকে দাঁড় করাতে হবে। তবেই আপনি শিক্ষাগুরুর আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন।
‘তুমি রবে নিরবে হৃদয়ে মম’।
একটি বাস্তব উদাহরন
উপস্থাপন করা যেতে পারে-শহরের একটি শিশু।বয়স ৭ বছর ।কিন্টারগার্টেন স্কুলে ১ম শ্রেনিতে
পড়ে।তার স্কুল শুরু হয় সকাল ৮ টায়,শেষ হয় ১০ টায়। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে সকালের খাবার খেয়ে পাসের বাসার বন্ধুর সাথে খেলতে
যায়। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গুজবের কারনে শিশুকে আর অযাজিত ভাবে বাইরে তেমন বের হতে দেয়া
হয়না। ছোট্ট সংসারে মাঝে মাঝে শিশুটি বড্ড
একা হযে যায়।ঘরে অনেক খেলার জিনিস পত্র থাকলে ও শিশু কে বলতে শুনি তুমি আমাকে আটকে
রাখ কেন। আমাকে ছেড়ে দেও আমি খেলতে যাব। ফুটবল তার প্রিয় খেলা।মাঝে মাঝে সে সিড়িতে
ফুটবল নিয়ে খেলে। সেখানেও মানা ।সিড়িতে মানা ,রাস্তায় মানা,বন্ধুদের সাথে মানা।ঘরের
মধ্যে সে কয়েকবার চেষ্ঠা করেছে কিন্তু অনেক শব্দ হওয়ার কারনে সেটা ও বন্ধ হয়েছে।
এবার অভিনব বুদ্ধিটা
তার থেকে শোনা-মা যখন ঘরের মধ্যে খেলা বন্ধ করে দিল,আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো আমি
যদি মায়ের একটা ওড়না বলের সাথে পেচিয়ে নেই তাহলে তো আর শব্দ হবেনা।এখন আমি বলে ওড়না
পেচায়ে নিয়েছি সেটাই নিয়মিত খেলি। আমার খেলা ও হয় আবার শব্দ ও হয়না। সে এও বলে- কেমন
বুদ্ধি বলেন। শহরের পর্যাপ্ত খেলার মাঠের অভাবে ও অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশের কারনে অনেক
শিশুকে এভাবে বেড়ে উঠতে হয়।
আমাদের স্কুল গুলোতে
ও তেমন কোন খেলার মাঠ নেই। আবার খেলার মাঠ থাকলেও অতিরিক্ত লেখা পড়ার বাহানা ও দোহাই
দিয়ে তা শেষ করে দেয়া হয়। অনেক আলোচনা ,গবেষনা পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা গেছে শিশুর
বিকাশে অনেকটা বিস্তরন ঘটে খেলার মাধ্যমে।স্কুল গুলোতে যখন খেলাধুলার কথা আসে,আমরা
শুধু ফুটবল খেলার কথা ভাবি। এর বাইরে যে আরও অনেক খেলা আছে যেগেুলো শ্রেনিকক্ষে বা
ঘরে বসে খেলা যায় তা মামুলি ভুলে যাই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বছরে ২ বার খেলার আয়োজন করা
। আর কখনো কোন আয়োজন হয় বলে আমার জানা নাই। কিন্তু কতৃপক্ষ ইচ্ছা করলে সপ্তাহে একদিন
নিয়ম করে কো-কারিকুলাম এ্যাকটিভিটি হিসাবে বিভিন্ন খেলাধুলা ,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা
ইতহাস, বিজ্ঞান,সাহিত্য নিয়ে গল্প বলার আসরের
আয়োজন করতে পারে।
শিশুর বৈচিত্র
ময় জীবনের অনেকগুলো বৈশিষ্ঠর মধ্যে একটা বিশেষ বৈশিষ্ঠ ,নতুন নতুন বিষয় জানার। অনেকে
হয়ত খেয়াল করতে পারেন শিশু যখন তার পরিচিত কারোর সাথে বেড়াতে বের হয় বিভিন্ন প্রশ্ন
করতে থাকে এবং সেগুলোর উত্তর ও দিতে হয়। আমাদের শিশু শিক্ষায় শিশুকে প্রশ্ন করতে উৎসায়িত
করা এবং উত্তর বুঝিয়ে দেয়ার মধ্যে বিস্তর ফারাক বিদ্যমান।শিক্ষাদাতা আর গ্রহিতার চোখের
ভাষায় যদি ভালোবাসা মমতা হৃদ্যতা না থাকে তাহলে শিশু শিক্ষা গ্রহনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে
। আস্তে আস্তে সে শিক্ষা থেকে হারিয়ে যাবে । শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
যে কোন শিক্ষণ-শিখন
কার্যক্রমের সঙ্গে যেমন প্রত্যক্ষভাবে পাঠ্যবিষয়/পাঠ্যবই, শ্রেণীকার্যক্রম, পাঠটীকা
যুক্ত তেমনি পরোক্ষভাবে পাঠ্যক্রম ও পাঠপরিকল্পনার প্রয়োজন।শিশুর পাঠদান, শিশুদের শিক্ষণ-শিখন
কার্যক্রমের অপর নাম শিশুর পাঠদান। শিশুকে কীভাবে পড়ালে পাঠদান ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে
মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা অনেক গবেষণা করেছেন, করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এ ক্ষেত্রে
রুশো, পেস্তালৎসি, ফ্রয়েবল, হার্বাট, মন্তেসরী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এরা সবাই
পাশ্চাত্যের মানুষ। আমরা তাদের শিক্ষানীতি ধার করে এনে নিজেদের দেশে চালু করি।
শিশুর পাঠদান পদ্ধতির একটা অংশ পাঠটীকা প্রণয়ন। একজন
শিক্ষকের প্রতিদিন প্রায় ৫-৬টা ক্লাস থাকে। ক্লাসের বাইরেও তাকে শ্রেণীপরীক্ষা মূল্যায়ন
ও বাড়ির কাজ দেখতে হয়। তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কাজও থাকে। কাজেই তার পক্ষে
প্রতিটি বিষয়ের পাঠটীকা করা কষ্টকর। এজন্য তিনি একটা ডায়েরি বা নোটবুক রাখেন। তাতে
প্রয়োজনীয় নোট করেন। তারিখ, শ্রেণী,বিষয়,প্রদত্ত পাঠ্যাংশ, শিখনফল, উপকরণ,মূল্যায়নের প্রশ্ন, ব্যবহারিক/ প্রদর্শন কার্য । পাঠটীকা অনুযায়ী শিক্ষক
ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত কিছু কাজ করতে হয়। যেমন- যে শ্রেণীর ক্লাসই হোক না কেন,
শিক্ষক পড়ানোর জন্য পূর্বপ্রস্ত্ততি নিবেন। শিক্ষার্থীদেরও পূর্বপ্রস্ত্ততি নেওয়ার
জন্য জোর তাগিদ দিবেন। বিগত পাঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ডায়েরিতে লেখা থাকবে। তদনুসারে
সামনের পাঠের প্রস্ত্ততি নিবেন।
শিক্ষার্থীদের
বুঝানোর জন্য পাঠদানের পূর্বেই শিক্ষক পাঠ্য অংশ কয়েকবার পড়ে দুর্বোধ্য অংশ ভালোভাবে
বুঝবেন। প্রয়োজনীয় শিখনবস্তু, শিখনকার্য ও শিখনফল নির্ণয় করবেন এবং ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসাবে তা লীপিবদ্ধ করবেন।
পাঠটীকার মধ্য
দিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাঠদান শেষ করা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হবেন। বাড়ির কাজ
যেমন হাতের লেখা, শ্রেনিপাঠ ও সৃজনশীল প্রশ্ন ইত্যাদির কোন একটি শিশুদের অবশ্যই দিবেন।
এতে শিশুরা লেখা ও গঠনমূলক কাজে অভ্যস্ত হবে। তাদের হাতের লেখা সুন্দর হবে এবং বানান
শুদ্ধ হবে। শিক্ষার্থীও আগামী ক্লাসের প্রস্ত্ততি আগেভাগে নিলে সে নিজ থেকে পাঠ্যাংশের
অনেকখানি বুঝতে পারবে। সে নিজ সামর্থের উপর শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে। বাকী যেটুকু বুঝতে
পারবে না তা তার হিসাবে থাকবে। শিক্ষকের পাঠদানের সময় সে তার না বুঝা স্থানে শিক্ষক
কী বলেন তা বুঝতে চেষ্টা করবে। বুঝতে পারলে আর প্রশ্নের দরকার নেই। নতুবা প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারবে। এভাবে তার পড়া পূর্ণতা
পাবে। শিক্ষক তার প্রস্তুতকৃত পাঠটীকা ও ডায়েরি অনুযায়ী শ্রেণীকার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং জ্ঞান,
দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের ফলাবর্তনের
শিখন মান উন্নয়ন করবেন।
বর্তমান শিক্ষা
ব্যবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষায় ১ম থেকে ৩য় শ্রেনি পর্যন্ত লিখিত কোন পরীক্ষা বা মূল্যায়ন
গ্রহন করা হবে না। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের শিখন মানের উন্নয়ন পরিমাপ করা
হবে এবং সে অনুযায়ী শিশু পরবর্তি শ্রেনিতে উন্নতি হবে। আমরা জানি
শিশুর তিন বছরে বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কের ৮০ শতাংশই গঠিত হয়ে যায়। তিন থেকে
পাঁচ বছরের মধ্যে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত মস্তিষ্ক গঠিত হয়। এই সময়টি শিশুদের শিক্ষা ও বিকাশের
জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাকি জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের ভিত্তি এ
সময়েই গড়ে ওঠে। তাই এ সময়ে কী শিখবে আর কিভাবে শিখবে তার ওপরই নির্ভর করে শিশুটির সাফল্যের
সম্ভাবনা। আর এ কারণেই শিশুর পূর্ণ বিকাশ নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞরা শৈশবের শিক্ষাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
অনেকের মতো আমিও
চেয়েছিলাম ১ম থেকে ৩য় শ্রেনি পর্য্ন্ত মূল্যায়নে বিশেষ কিছু নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু
অত্যন্ত হতাশার বিষয় পুরানো সেই শিক্ষক ডায়েরী কে অবলম্বন করে শিক্ষার অত্যন্ত বিবেচ্য
ও গুরুত্বপুর্ন বিষয় কে অবহেলায় পর্যবসিত হচ্ছে তা দেখতে হচ্ছে। প্রাক -প্রাথমিক শিক্ষা
দানে শ্রেনিকক্ষ ফুল দিয়ে সাজানো থাকলে ও শিশুর শিক্ষা জীবন সে ফুল ফোটাতে আমরা ব্যর্থ।অনেকে হয়ত স্বীকার না করলে স্পষ্টত যে দিনের পরে দিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
শিশু অনান্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাচ্ছে।শিক্ষার মান তলানিতে।দায় কার । শিক্ষা দান করা
যেমন শিক্ষকের দায়িত্ব তেমনি শিক্ষা গ্রহন শিশুর অধিকার।আমরা তাদের কে সে অধিকার বন্চিত
করতে পারি না। শিশুর বেড়ে ওঠার বৈশিষ্ঠ অনেকে
বিশ্লেষন করেছেন এবং এও স্পষ্ট যে শিশু সকল ক্ষেত্রে অন্দোলিত হতে চায়।শিক্ষা গ্রহনে
যখন সে আন্দোলিত হয় না বা নিজের প্রত্যাশিত চাওয়া প্রকাশিত হয় না তখন সে শিক্ষা গ্রহনে
আগ্রহ হারিয়ে নিজেকে অন্য জগতে নিয়ে যায় যার
পরিনাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

1 Comments
so good.
ReplyDelete