Header Ads Widget

শিশুর সামগ্রিক বিকাশে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা,আমাদের করনীয় কি?

  



 সা্ম্প্রতিক সময়ে  প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদ বাতিল করার যে সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিয়েছে, এটা খুবই ভয়ংকর একটা আশঙ্কার জায়গা তৈরি করেছে সবার মধ্যে, তবে  সরকার বা রাষ্ট্র  কি জন্য,  কি কারনে করেছে সেটা কোন বিষয নয়! কিন্তু এই দুটি পদ বাতিল বা বিলুপ্তি বা কোন দিন আর এই পদে জনবল নিয়োগ হবে না বা আমাদের এ বিষয়ে আর কোন আগ্রহ বা প্রয়োজনীতা বোধগম্য হবে না  এটা বলা বাহুল্য তবে এটা স্পস্ট করে বলতে পারি প্রাথমিক শিক্ষা যদি শিশুর জন্য সুতিকাগার হয় তাহলে শারিরীক শিক্ষা হচ্ছে শিশুর আতুড়ঘর, আর সংগীত শিক্ষা  শিশুর অক্ষরাগার।


প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের শারীরিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত বিকাশে শারীরিক শিক্ষা একটি মূল ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে, আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা নিয়ে অনেকটা অবহেলা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের নিয়োগ বন্ধ হওয়ায় এটি আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব যেমন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, তেমনি এটি শিশুদের সমগ্র জীবনব্যাপী উপকারে আসে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের শারীরিক শিক্ষা তাদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। শিশুদের মধ্যে নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ যেমন খেলা, ব্যায়াম, দৌড়, সাঁতার ইত্যাদি তাদের শারীরিক গঠন ও স্বাস্থ্য উন্নত করে। শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের পেশী, হাড়ের গঠন এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের কার্যকারিতা শক্তিশালী হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের মধ্যে নিয়মিত শারীরিক শিক্ষা তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হয়। বিশেষ করে, বেড়ে ওঠা শিশুদের জন্য শরীরচর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

শারীরিক শিক্ষার অপরিহার্যতা এমন যে, এটি শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যার মতো মুটিয়ে যাওয়া, হৃদরোগ ও ফুসফুসের নানা সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে শিশুদের মেটাবলিক সুস্থতা এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের সুস্থ জীবনযাপনকে দীর্ঘস্থায়ী করে।

শারীরিক শিক্ষা শিশুদের মনোযোগ এবং একাগ্রতা বাড়াতে সহায়তা করে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে শারীরিক শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে তাদের একাডেমিক ফলাফলও উন্নত হতে পারে। শারীরিক শিক্ষা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিশুদের দেহের শুদ্ধ ব্যবহারের পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্রমও শক্তিশালী হয়। এই কারণে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষা শিশুদের শ্রেণীকক্ষে আরও মনোযোগী এবং সক্রিয় করে তোলে।

শারীরিক শিক্ষা শিশুদের শারীরিক সামর্থ্য যেমন বৃদ্ধি করে, তেমনি তাদের মনোযোগ এবং একাগ্রতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত শারীরিক শিক্ষা শিশুদের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করতে সহায়ক, যা তাদের পড়াশোনায় আরও সফলতা এনে দেয়। শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুরা যে কৌশল ও ধৈর্য নিয়ে কাজ করে, তা তাদের ভবিষ্যতে একাডেমিক সফলতার জন্য সহায়ক হয়।

শিক্ষার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন ঘটে। তারা দলবদ্ধভাবে খেলা ও শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করে, যা তাদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সম্পর্কের গঠন করে। শারীরিক শিক্ষা শিশুদের একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা, সহযোগিতা এবংনেতৃত্বদানের গুণাবলী শেখায়। খেলাধুলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা দলগত কাজ শিখে, যা তাদের ভবিষ্যতে সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মানসিক এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাদের সামাজিক দক্ষতাও বৃদ্ধি করে। এটি তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ, অন্যদের মতামত শ্রদ্ধা এবং একে অপরের সঙ্গে কাজ করার শিক্ষা দেয়। এই কারণেই শারীরিক শিক্ষা শিশুদের সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলে এবং তাদের ভবিষ্যতে এক সুষ্ঠু সমাজে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে।

শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্যই নয়, এটি শিশুদের মানসিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর মধ্যে মানসিক চাপ কমাতে এবং তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। স্কুল জীবনে শিশুরা প্রায়ই একাডেমিক চাপ এবং সামাজিক চাপের সম্মুখীন হয়। শারীরিক শিক্ষা শিশুদের সেই চাপ কমাতে সাহায্য করে, কারণ শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা মানসিকভাবে শিথিল হতে পারে। শিশুর আত্মবিশ্বাস এবং স্বকীয়তাও বৃদ্ধি করে। যখন তারা কোনো খেলায় অংশগ্রহণ করে এবং সফলতা অর্জন করে, তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস ও আনন্দের জন্ম হয়। এটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে এবং তাদের জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে। শারীরিক শিক্ষা শিশুদের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমানোর একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত ফলাফল উন্নত করতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, যা তাদের একাডেমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়ক হতে পারে। শারীরিক শিক্ষা এবং শারীরিক খেলাধুলার মধ্যে শিশুদের পেশী এবং মস্তিষ্কের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা তাদের মোটিভেশন এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।

এটি শিশুদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা এবং সৃজনশীল চিন্তা বিকাশেও সহায়ক। শিশুরা যখন শারীরিক শিক্ষা ক্লাসে অংশগ্রহণ করে, তখন তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা, রাগ নিয়ন্ত্রণ, এবং শৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের একাডেমিক জীবনেও সহায়ক হয়। শিশুদের মধ্যে সামাজিক সমতা ও সৃজনশীলতা সৃষ্টি করে। শারীরিক শিক্ষা কেবল একটি খেলাধুলা বা শরীরচর্চা নয়, এটি এক ধরনের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনাও। শিশুরা শারীরিক শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের সৃজনশীলতা এবং নতুন কিছু তৈরি করার ক্ষমতা তৈরি করে। এটি তাদের ভবিষ্যতে কাজের দক্ষতা এবং বিভিন্ন সৃজনশীল ক্ষেত্রে ও সহায়তা করে।

এছাড়া, শারীরিক শিক্ষা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সমান সুযোগ প্রদান করে। এটি সমাজে লিঙ্গভেদ দূর করতে সহায়ক হতে পারে, কারণ খেলাধুলা ও শারীরিক শিক্ষার মাধ্যমে সব ধরনের শিশু সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।


 আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষা শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংগীত কেবল একটি শখ বা বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি শিশুর মানসিক, শারীরিক, সামাজিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সংগীতের মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতা, শৃঙ্খলা, মনোযোগ এবং যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস, আবেগপ্রকাশ এবং মানবিক মূল্যবোধও শিখায়। বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষকের নিয়োগ অনেক সময়ই উপেক্ষিত হয়, কিন্তু সংগীত শিক্ষার গুরুত্ব এবং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার। সংগীত শিক্ষা শিশুর সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংগীতের মাধ্যমে শিশুরা তাদের অনুভূতিকে প্রকাশ করতে শেখে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করতে উদ্বুদ্ধ হয়। সংগীতের পাঠশালায় শিশুরা সুর, রিদম, লয় ও সঙ্গীতের অন্যান্য মৌলিক উপাদান সম্পর্কে জানে, যা তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও কল্পনা শক্তিকে শাণিত করে।

এটি তাদের মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়, কারণ সংগীত শিশুদেরকে নতুন উপায়ে চিন্তা করার, সমস্যা সমাধান করার এবং আবেগ প্রকাশের বিভিন্ন মাধ্যম খুঁজে পেতে উৎসাহিত করে। বিশেষ করে, একটি শ্রেণীকক্ষে সংগীতের মাধ্যমে শিশুরা বিভিন্ন আবেগ যেমন আনন্দ, দুঃখ, রাগ এবং প্রেমের অনুভূতি সুর এবং সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুভব করে এবং এর দ্বারা তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

সংগীত শেখার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এবং আবেগপ্রকাশের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যখন শিশুরা সংগীতের কোনো অংশ শিখে এবং তা পরিবেশন করে, তখন তারা নিজের উপর আস্থা রাখে। গান গাওয়ার মাধ্যমে শিশুরা নিজেদের কথা প্রকাশ করতে পারে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

এছাড়া, গান বা সঙ্গীতের পরিবেশনা শিশুদের আবেগপ্রকাশে সহায়তা করে। তারা শিখে যে, সংগীতের মাধ্যমে তারা নিজের আবেগ এবং অনুভূতিকে আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে, যা তাদের মানসিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতা উন্নত করতে সহায়ক হয়।

সংগীত শিক্ষা শিশুর ভাষাগত দক্ষতা ও বুদ্ধিগত ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। সংগীতের মাধ্যমে শিশুরা শব্দ, ছন্দ এবং গানের লাইন শিখে, যা তাদের শব্দভান্ডার এবং ভাষার দক্ষতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি তাদের পড়াশোনায় এবং ভাষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে সহায়ক হয়।

এছাড়া, সংগীত শেখার মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্কের দুটি অংশ সক্রিয় হয়। একদিকে এটি শারীরিক দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে এটি ভাষাগত এবং বুদ্ধিগত ক্ষমতা উন্নয়নের জন্যও সহায়ক। সংগীতের সঙ্গে যুক্ত হতে গিয়ে শিশুরা সুর এবং ভাষার মধ্যে সম্পর্ক শিখে, যা তাদের শিখতে আরও সহজ এবং কার্যকর করে। সংগীতের মাধ্যমে শিশুর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয়। যখন শিশুরা সংগীত গায় বা বাজায়, তখন এটি তাদের মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। সংগীত মস্তিষ্কে এমন কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা শান্তি এবং শিথিলতার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এছাড়া, সংগীতের মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে রিদম ও লয়ের অনুভূতি বাড়ে, যা তাদের শারীরিক সমন্বয় উন্নত করতে সহায়তা করে। সঙ্গীতের মাধ্যমে শরীর ও মস্তিষ্কের মধ্যে একটি সমন্বয় তৈরি হয়, যা শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষা শিশুদের মধ্যে সামাজিক সমতা এবং সাংস্কৃতিক পরিচিতি গড়ে তোলে। শিশুদের যখন সংগীত শেখানো হয়, তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগীত এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে। এটি তাদের মধ্যে অন্যান্য সংস্কৃতি ও দেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলে এবং একটি ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনে সহায়তা করে। এছাড়া, সংগীতের মাধ্যমে শিশুরা নানান ধরনের সুর, ধ্বনি এবং গান সম্পর্কে জানে, যা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করে তোলে। এটি তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে সহায়তা করে, যা একটি সুখী এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষাসংগীত বিষয় দুটি উপেক্ষা করলে শিশুদের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে, যা তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং শিক্ষাগত বিকাশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এই দুটি বিষয়ে শিক্ষার অভাব শিশুর সার্বিক উন্নতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, এবং এর প্রভাব তাদের ভবিষ্যৎ জীবনেও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

শারীরিক শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের  তথ্য  গবেষণা‑ প্রতিবেদন  অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপে সুযোগ দেওয়া হলে শিক্ষণ‑সিদ্ধতা, মনোযোগ, সামাজিক‑মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।  এই গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষক ও স্কুল প্রশাসকরা জানান, শারীরিক ক্রিয়াকলাপে যুক্ত হলে “শিক্ষা‑সিদ্ধতা “মনোযোগ”, “শিক্ষাগত ফল” এসব ভালো হয়। একই সঙ্গে সামাজিক‑আবেগীয় দক্ষতা ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশও উন্নত হয়েছে।

এক গবেষণা বলছে, প্রাথমিক বয়েসে সৃজনশীল শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের “স্বাস্থ্য, সামাজিক, একাডেমিক, আচরণগত” দিক থেকে সুবিধা দান করে। আরেক টি গবেষনা বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সক্রিয় পদ্ধতি প্রয়োগ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক, আবেগীয় ও সামাজিক‑স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উন্নতি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে “শারীরিক শিক্ষা ক্লাস” বা “শারীরিক কার্যকলাপ” বাড়ানো হলে মটর দক্ষতা ও ফিটনেস‑লেভেল উন্নীত হয়। যেমন, ৯‑১০ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের একটি অতিরিক্ত ক্লাস যুক্ত করার পর মটর দক্ষতা -২৭% ভালো হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা এর নিয়মিত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মোটর দক্ষতা, পদার্থচর্চা, নিয়ন্ত্রিত গতিবিদ্যা ও স্বাস্থ্য‑লাভে সহায়ক যা শুধু শারীরিক নয়, মস্তিষ্কীয় কার্যক্রমও প্রভাবিত করে। যেমন একটি জার্মান অধ্যয়ন দেখিয়েছে, শারীরিক শিক্ষা বেশি দেওয়ার রাজ্যে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও সামগ্রিক দক্ষতাও উন্নত হয়েছে।

 অন্য এক বিশ্লেষণমূলক প্রকাশনায় বলা হয়েছে যে, “সংগীত শিক্ষা” শিক্ষার্থীদের শুধু সঙ্গীত‑দীক্ষাই দেয় না; এটি ভাষাগত, বুদ্ধিগত, সামাজিক এবং আবেগীয় বিকাশেও দরকারি ভূমিকা পালন করে।  যেমন, সংগীত‑শিক্ষা শিশুদের শ্রবণশক্তি, স্মৃতিশক্তি এবং শব্দভিত্তিক ভাষাগত দক্ষতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সংগীত‑শিক্ষার মধ্যে যুক্ত শিশুদের একাডেমিক ও সামাজিক সফলতা‑র পরিসংখ্যান ভালো।  শিক্ষাবিদরা বলছেন, স্কুল‑পরিচালনায় সংগীত শিক্ষা শিক্ষার্থীদেরসৃজনশীলতা, আবেগপূর্ণ যোগাযোগ আত্মবিশ্বাস এবং সামাজিক সহযোগিতা গড়ে তোলে।   উদাহরণস্বরূপ, সংগীত শিখার মাধ্যমে শিশুরা “আবেদন করতে পারে”, “ভাল অনুভব করে”, “দলে কাজ করে”এরূপ ফল পাওয়া গেছে।  একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সংগীত শিক্ষার মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক ও আবেগীয় স্বাস্থ্য উন্নত করে” এবং সেটি শুধু সাংস্কৃতিক বা বিনোদনমূলক বিষয়ই নয়।

সংগীত শিক্ষা‑প্রক্রিয়ায় “খেলা ও সুর” একত্রে ব্যবহৃত হলে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য তা আরও কার্যকর হয়, যেমন গবেষণায় বলা হয়েছে, সংগতভাবে আন্দোলন ও সুর সংযুক্ত করলে শিশুরা সুর‑রিদম ও সমন্বয়ে আরও উন্নতি পায়।সংগীত শিক্ষা শিক্ষার্থীদের ভাষাগত, বুদ্ধিগত, সামাজিক ও আবেগীয় দিক থেকে বিকাশে সহায়ক। এটি শুধুই “গান শেখা” নয় এটি একটি পরিপূর্ণ শিক্ষামূলক মাধ্যম, যেখানে সৃজনশীলতা, শৃঙ্খলা, মনোযোগ, দলবদ্ধ কাজ সহ অনেক গুণ বিকাশ পায়।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শিশুরা কেবল পাঠ্যপুস্তকই পড়ে না,তারা খেলতে চায়, গান শুনতে ও গাইতে চায়, দলে কাজ করতে চায়। এই শিশুরাই আগামী সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎ। তাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর‑র মুখ্য দায়িত্ব হলো তাদেরকে শুধুই একাডেমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ না রেখে সম্পূর্ণ বিকাশ সুযোগ দেওয়া। সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা‑র নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি উদ্বেগজনক সংকেত। আমরা হয়তো ‘শিক্ষার বৈচিত্র্য’ ও ‘মানুষ হিসেবে গড়ার সুযোগ’কে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছি না। শিশুদের মন, মস্তিষ্ক, দেহ এই তিনটি একসঙ্গে বিকাশ পায়। তাই, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাকে দায়িত্বশীলভাবে পুনরায় চালু করতে হবে, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে। শিক্ষিত, সৃজনশীল, শারীরিকভাবে সুস্থ ও মানসিকভাবে স্থিতিশীল শিশুরাই আগামীর দায়িত্ব গ্রহণ করবে। শুধু নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণই যথেষ্ট নয় সেটি বাস্তবায়নে মনোযোগ, প্রশিক্ষণ, উৎস এবং সময় দেওয়া জরুরি। না হলে আমাদের পাঠ্য‑কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুর বিকাশ মুখ থুবড়ে পড়বে!


 

 

 

 

 

 

 

Post a Comment

0 Comments